আজ || বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪
শিরোনাম :
  তালায় খাদ্য নিরাপত্তায় ঝুঁকি ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ক প্রশিক্ষণ       তালায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের মাঝে হাঁসের বাচ্চা বিতরণ       তালায় জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ উপলক্ষ্যে প্রতিযোগিতা       তালায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের ভিত্তি প্রস্থর স্থাপনের উদ্বোধন       তালা উপজেলা চেয়ারম্যান ঘোষ সনৎ কুমারের সমর্থনে বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত       তালায় অসুস্থ বন্ধুর জন্য ৩০ হাজার টাকা দিলেন বন্ধুরা       তালায় তিন দিনব্যাপী কৃষি মেলার সমাপনী       সাতক্ষীরায় বৈদ্যুতিক খুটিতে ধাক্কায় মোটরসাইকেল চালক নিহত       তালায় সর্বজনীন পেনশন স্কিম বিষয়ক অবহিতকরণ সভা       তালায় আরএমটিপি প্রকল্পের বাজার সংযোগ সভা অনুষ্ঠিত    
 


মুক্তিযোদ্ধা সম্মন্ধে দুটি কথা

আঃ কাঃ সিরাজউদ্দীন ( ফাইল ছবি)

‘তালা অরুণোদয় প্রকাশনা পরিষদ’ এর সকলকে জানাই আমার লাল গোলাপ শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। মহান স্বাধীনতা দিবস ২০১১ উপলক্ষ্যে ‘অরুণোদয়’ নামে যে পত্রিকাটি বের করা হবে তা বর্তমান প্রজন্মের স্কুল-কলেজের অনেক ছাত্র-ছাত্রীরা জানবে যে, ১৯৭১ সালে ২৫ মার্চ কি নির্যাতন ঘটেছিল আমাদের উপরে। তাই তাদের জানতে হবে মুক্তিযুদ্ধ কি? এবং কেন ঘটেছিল? আমি আবুল কালাম সিরাজউদ্দীন ১৯৫৭ সালে সরাসরি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ি। আমি তখন তালা থানা আওয়ালীগের দপ্তর সম্পাদক ও জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য নির্বাচিত হই এবং বিভিন্ন আন্দোলন ও সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ি।

 

৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান এবং লৌহ মানব আইয়ুব খানের পতন ঘটে। তখন জেনারেল ইয়াহিয়া খান পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। আমাদের আওয়ামীলীগের চাপে পড়ে জেনারেল ইয়াহিয়া খান ১৯৭০ সালে সাধারণ নির্বাচন দিতে বাধ্য হন। সেই নির্বাচনে আমাদের নেতা শেখ মুজিবের আওয়ামীলীগ নিরুষ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। তা সত্ত্বেও ইয়াহিয়া খান ক্ষমতা হস্তান্তর করল না। তখন ইয়াহিয়া খান আমাদের সাথে প্রতারণা করে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে সৈন্য পূর্ব পাকিস্তানে গোপনে আমদানি করতে থাকে এবং মুজিবকে আশ্বাস দিতে থাকে আপনাকেই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী করা হবে। তখন সোনার গাঁ হোটেলে বসে ইয়াহিয়া মুজিব বৈঠকে বসে। এ সময় তাদের আলোচনা ব্যর্থ হয়। তখন মুজিব উত্তেজিত হয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে আসে। তখন ইয়াহিয়া খান পাক হানাদার বাহিনীর প্রধান প্রধান কমান্ডারদের উপর অপারেশন সার্চ লাইট আক্রমণ করার আদেশ দিয়ে রাতে বেলায় পালিয়ে ঢাকা থেকে ইসলামাবাদে চলে যান।

ঐ দিন ২৫ মার্চ রাত ১১ টায় হানাদার বাহিনী হাজার হাজার সৈন্য ভারী অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ঢাকার রাজ পথে হাজার হাজার নিরীহ নিরস্ত্র মানুষের উপর ঝাপিয়ে পড়ে তাদের হত্যা করে এবং হাজার হাজার বাড়ি-ঘর ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়। ঢাকার রাজাবাগ পুলিশ লাইন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের উপর নির্বিচারে গুলি বর্ষণ করে। এই বিভৎস্য হত্যাকান্ড দেখে যারা বেঁচে ছিলেন তারাও তাদের পরিবার সেই রাত্রেই পার্শ্ববতী দেশ ভারতে পালিয়ে যায়। তখন ঢাকা ছাত্র ও জনতা এবং ই পি আর পুলিশ এবং আনসার বাহিনীর লোক একত্রিত হয়ে খান সেনাদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ করে। ২৫ মার্চ শেষ রাতে বঙ্গবন্ধু মুজিব চট্রগ্রাম সহ বিভিন্ন জেলা শহরে ওয়্যারলেসের মাধ্যমে স্বাধীনতা যুদ্ধ ঘোষনা করেন। তখন হানাদার বাহিনীর শত্রুরা শেখ মুজিবকে বন্দি করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যায়। তখন এ দেশের হাজার হাজার মানুষ ভয়ে রাতের আধারে পশ্চিম বঙ্গে পালিয়ে যায় এবং যুবকেরা সেখানে যুদ্ধ শিবির খুলে প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করে।


মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধের অগ্রগতি দেখে ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দ্রিরা গান্ধী খুশি হয়ে ভারতের কয়েক হাজার মিত্র বাহিনীকে এক সঙ্গে মিলিত হয়ে যুদ্ধ করার আদেশ দেন। মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতের মিত্র বাহিনী সম্মিলিত ভাবে সমস্ত সেক্টরে যুদ্ধে জয়ী হতে থাকে, তখন ভারতের প্রধান সেনাপতি মানেকশ ও ভারতে পূর্ব সেক্টরের দায়িত্বে নিয়োজিত জীবন সং অড়োরা বারবার ঘোষনা করতে থাকেন যে, হে খান সেনারা তোমরা তোমাদের অস্ত্র ডাল দাও এবং তোমরা স্যারেন্ডার কর। তখন ভাব খারাপ দেখে পাকিস্তানের প্রধান সেনা পতি নিয়াজী ৯৬ হাজার পাক সৈন্য নিয়ে ১৬ ডিসেম্বর রেসকোর্স ময়দানে লক্ষ লক্ষ লোকের সামনে মিত্র বাহিনীর প্রধান অড়োরার কাছে আত্ম সমর্পণ করে।

পরিশেষে আমি আমার দেশবাসীর কাছে আবেদন করি, আমরা সকলের মিলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এই দেশটাকে সুন্দর বাংলা (ডিজিটাল বাংলা) তৈরি করি। রাজনৈতিক হানাহানি, মারামারি, খুন, ধর্ষণ, ছিনতাই, নারী, শিশু পাচার, ঘুষ, দূনীতি, চাঁদাবাজী, টেন্ডারবাজী, এসিড নিক্ষেপ পরিহার করে বিশ্বের মধ্যে একটি উন্নত দেশ গড়ে তুলি, তাহলে ভাষা সৈনিক, ২ লক্ষ মা বোনের ইজ্জত, ৩০ লক্ষ শহীদের আত্ম শান্তিতে কবরে ঘুমিয়ে থাকতে পারবে।

পুনশ্চ, মুক্তিযোদ্ধা আঃ কাঃ সিরাজউদ্দীন ২০১১সালের ৮ মে মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর আগে এই লেখাটি অরুণোদয়-মহান স্বাধীনতা দিবস বিষয়ক পত্রিকা তালা সাতক্ষীরা, ২৬ মার্চ ২০১১ সাল কর্তৃক প্রকাশিত হয়।


Top